গোটা গাজা দখলের ঘোষণা নেতানিয়াহুর

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সোমবার ইসরাইল গাজার পুরো ভূখণ্ডের ‘নিয়ন্ত্রণ নেবে’ বলে ঘোষণা করেছেন। এ সময় গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরালো করা হয়, যার অংশ হিসেবে দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে ‘অভূতপূর্ব হামলার’ আগাম ঘোষণা দিয়ে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। খবর এএফপি’র।

একই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস আধানম গেব্রেয়েসুস সতর্ক করে বলেন, ‘গাজায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে ভুগছে।‘ তাঁর ভাষায়, ‘টনকে টন খাদ্যসামগ্রী সীমান্তে আটকে আছে, মাত্র কয়েক মিনিট দূরে।’

এর আগে ইসরাইল জানায়, তারা সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেবে। তবে এই পদক্ষেপকে মানবিক সংকট মোকাবেলায় ‘অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থা।

নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘লড়াই তীব্র হচ্ছে এবং আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমরা গাজা উপত্যকার পুরো অঞ্চলই নিয়ন্ত্রণে নেব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পিছু হটব না। সফল হতে চাইলে এমনভাবে এগোতে হবে যাতে আমাদের থামানো না যায়।’

ইসরাইল চলতি মে মাসের শুরুতে গাজার পূর্ণ দখল এবং ‘জনগণকে স্থানচ্যুত করার’ উদ্দেশ্যে একটি সম্প্রসারিত সামরিক পরিকল্পনা অনুমোদন করে।

ত্রাণ নিয়ে দ্বন্দ্ব: খাদ্য না, কূটনীতি?

অবশ্য দেশটির চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির ত্রাণ দেওয়ার বিরুদ্ধে সাফ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের জিম্মিদের তো কোনো মানবিক সহায়তা পাচ্ছে না।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে এক্সে লেখেন এই মন্তব্য।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ সীমিত সাহায্যের অনুমোদনকে যুক্তি সঙ্গত বলে মন্তব্য করেন: ‘এই সহায়তা কেবল বেসামরিকদের খাওয়ার জন্য দেওয়া হবে এবং এতে আমাদের মিত্ররা কূটনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখতে পারবে।’

‘অ্যাপোক্যালিপসের মতো’ হামলা: খান ইউনিসে ভয়াবহতা

সোমবার দিনভর ইসরাইলি বাহিনী গাজায় অন্তত ১৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় বলে জানায় সেনাবাহিনী। শুধু খান ইউনিসেই ১১ জন নিহত হন, আরও ১১ জন নিহত হন অন্যান্য এলাকায়।

খান ইউনিসে অবস্থানরত এএফপির প্রতিবেদনে দেখা যায়, আহতদের বাঁচাতে হাসপাতালে ছুটে আসছে গাড়ি, আহত শিশুদের কেউ ট্র্যাকস্যুট পরে, কেউ রক্তাক্ত পায়ে খালি গায়ে মেঝেতে বসে আছে।

গাজা শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সারহান বলেন, ‘পুরো শহর যেন ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে, প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে গুলি, আগুনের বলয়, এফ-১৬, হেলিকপ্টার, সব একসঙ্গে চলছে।’

উত্তরের দেইর আল-বালাহ শহরে ভাই হারিয়ে আহাজারি করেন আয়মান বাদওয়ান। বলেন, ‘আমরা ভীষণ ক্লান্ত, শারীরিক, মানসিক, সব দিক থেকেই বিধ্বস্ত। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এখনই কোনো সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, বিশ্বকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’

বিপর্যয়ের পরিসংখ্যান: ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরাইলের দিকের নিহত: ১,২১৮ জন (বেশিরভাগই বেসামরিক), জিম্মি করা হয়: ২৫১ জন, এখনও গাজায় আছেন: ৫৭ জন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

গাজায় ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি নতুন আক্রমণে নিহত: ৩,১৯৩ জন, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর মোট নিহত: ৫৩,৩৩৯ জন (গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী)।