যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ১৯ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন ট্রাম্প

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই ধারাবাহিকতায় ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া ৭টি দেশের ভ্রমণকারীদের ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয় সময় বুধবার (৪ জুন) এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। আগামী সোমবার (৯ জুন) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এসব নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

এটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম বিতর্কিত নীতির পুনরাবৃত্তি। তবে ২০১৭ সালের নিষেধাজ্ঞার সময় বিমানবন্দরে দেখা দেওয়া বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবার আগাম নোটিশের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এ ঘোষণায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কিছু দেশ আবারও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ১২টি দেশ হলো- আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। 

অন্যদিকে, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা থেকে আগত ভ্রমণকারীদের জন্য অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এই নতুন নিষেধাজ্ঞার আরোপের কারণ হিসেবে কলোরাডোর বোল্ডারে রোববারের সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টানেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যেসব ভ্রমণকারী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান, তারা বিপজ্জনক হতে পারে। 

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো কলোরাডো হামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তি মিশরের নাগরিক হলেও দেশটি ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি পর্যটক ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুনরায় দায়িত্ব নিয়েই ট্রাম্প এ নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আগের এক সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমর্থন থাকায় এবার তার আইনি ভিত্তি আরও শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বছর ২০ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশের তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালককে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘বৈরী মনোভাব’ ও নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা তা নথিভুক্ত করতে বলা হয়।

এর আগে, প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক নির্বাহী আদেশে ৭ টি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন- এই ৭টি দেশ ছিল সে তালিকায়। এগুলো মূলত প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। 

এই আদেশটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুর দিককার সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও বিভ্রান্তিকর মুহূর্তগুলোর একটি ছিল। 

নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশের যাত্রীদের কেউ কেউ বিমানেই উঠতে পারেননি, আবার কেউ যুক্তরাষ্ট্রে নেমে বিমানবন্দরেই আটক হন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পর্যটক এবং বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের দেখতে আসা মানুষরাও ছিলেন। 

এই আদেশটিকে সাধারণত ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’  বা ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’ নামে ডাকা হতো, যা পরে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে পুনর্গঠিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পায়।যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ১৯ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন ট্রাম্প