ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স: মাখোঁ

আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। খাবারের অভাবে গাজায় একের পর এক মৃত্যুর মধ্যে এই সাহসী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিলেন তিনি। তবে তার এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন মাখোঁ। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথাও জানান তিনি।

পোস্টে মাখোঁ লেখেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় যুদ্ধের অবসান ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা।’

২০২৩ সালে হামাস ইসরায়েলে হামলা করার পর প্রথম দিকে তেল আবিবকে সমর্থন করেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত অভিযানের কারণে ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তিনি। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়ে আসছেন মাখোঁ।

এক্স পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘শান্তি সম্ভব, মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির প্রতি সততার দিক থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।’

সম্প্রতি হামাস সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না— এই অজুহাতে কাতারে চলমান গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনা সংক্ষিপ্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরপরই এই ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

এদিকে, মাখোঁর এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ বলেন, ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করবে। তাছাড়া গাজা যেমন একটি ইরানি দোসরে পরিণত হয়েছিল, তেমনি আরেকটি দোসর তৈরির ঝুঁকি তৈরি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য একটি লঞ্চ প্যাড। এর পাশে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ থাকবে না।’

তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মাখোঁর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

মাখোঁর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মাহমুদ আব্বাসের ডেপুটি হুসেইন আল-শেখ বলেছেন, ‘(মাখোঁর) এই অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থনকে প্রতিফলিত করে।’

অন্যদিকে, এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাখোঁর সিদ্ধান্তকে জোরালোভাবে প্রত্যাখান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

তিনি বলেন, ‘অবিবেচনাপ্রসূত নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কেবল হামাসের প্রচারকে শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি শান্তি প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, এটি ৭ অক্টোবরের নিহতদের প্রতি চরম অবমাননা।’

বর্তমানে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশও রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ তার মিত্ররা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি।

এরই মধ্যে, আগামী সপ্তাহে ফ্রান্স ও সৌদি আরব জাতিসংঘে যৌথভাবে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

এর আগে, গত মাসে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে একটি বৃহত্তর উদ্যোগের পক্ষে জোর দিয়েছিলেন মাখোঁ, তবে ইসরায়েলকেও স্বীকৃতি ও আত্মরক্ষার অধিকার সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এ ছাড়াও গাজার চলমান পরিস্থিতিতে কীভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানো যায় এবং যুদ্ধ থামানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার (২৫ জুলাই) ব্রিটেন ও জার্মানির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে মাখোঁর।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাকে সমর্থন করে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। একটি যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যে দুর্ভোগ ও অনাহার চলছে, তা বর্ণনাতীত এবং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’