যেকোন সংগঠনের অমিমাংসিত ঘটনার সমাধান ছাড়াই আবির্ভাব নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় যেকোন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের অমীমাংসিত ঘটনা ও রাজনৈতিক তর্কসমূহ সর্বাঙ্গের আলোচনা সাপেক্ষে সমাধানের পূর্বেই তাদের আবির্ভাব ঘটলে স্বভাবতই তা নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করি।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর প্রকাশ্যে এসেছে ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। এরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিবৃতি এলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ-ও বলেছে, চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রাপ্ত নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশের সকলক্ষেত্রে সংস্কার অত্যাবশকীয়। পুরনো ঘুনে ধরা রাজনৈতিক কাঠামো থেকে বের হয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য এখন প্রয়োজন চলমান রাজনৈতিক চর্চাসমূহের মৌলিক সংস্কার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে জাতীয় ঐক্য গঠন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অংশীজনের মতামতকে গুরুত্ব প্রদান করে।
আরও পড়ুন: ‘শিবির রাজনীতি করলে ছাত্রলীগও একদিন আসবে না তার নিশ্চয়তা কী?’
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে ক্যাম্পাসে চলমান রাজনৈতিক ধোঁয়াশা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ নিরসনে স্বচ্ছ ও সহনশীল রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে আমরা ফ্যাসিস্ট সংগঠন ছাত্রলীগকে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে গুপ্ত রাজনীতির অন্ধকার মাধ্যমকে বেছে নিতে দেখছি। আমরা বিশ্বাস করি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুপ্ত রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রকাশ্য পরিচয় ও সুস্থচর্চার মতাদর্শিক লড়াইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠেই সংগঠনগুলোর মূল্যায়ন হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মুক্তচর্চার বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’
‘এমতাবস্থায় সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রশাসন ও রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধান করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদী, লেজুড়বৃত্তিক, সন্ত্রাসী ও বর্জনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করছে।’
১৯৮৯ সালে ছাত্রদলকর্মী কবির হত্যাকাণ্ডের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধে একমত হয় ২২টি সংগঠন। এরপর থেকে সেখানে এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার দর্শন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি নিজেকে ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার প্রচার সম্পাদক জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে সংগঠনটি প্রকাশ্যে আনেন। ওই বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামও উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে শিবিরের সভাপতি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের হারুনুর রশিদ রাফি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাংলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মহিবুর রহমান মুহিবের নাম জানানো হয়েছে।
ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি দাবি করে ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানান।
ছাত্রশিবিরের বিবৃতির পর রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। তারা বিক্ষোভে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির বিরোধী স্লোগান দেন। বক্তারা বলেন, শিবির ফিরে এলে কয়েক বছর পর ছাত্রলীগও দেখা যাবে ফিরে এসেছে। তাই শিবির ও ছাত্রলীগ এই দুই ফ্যাসিস্ট সংগঠনই নিষিদ্ধ থাকতে হবে।